রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

বইমেলা | বইমেলা চলতে থাকে, আর নতুন গল্প তৈরি হয়, শেষদিনে লিখলেন প্রকাশক শুভঙ্কর দে

Kaushik Roy | ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৪ : ৫২Kaushik Roy


শুভঙ্কর দে


কলকাতা বইমেলায় আমার প্রথম যাওয়া ১৯৮২ সালে। তখন আমার ছ'বছর বয়স। বইমেলায় বই দেখতে বা বই কিনতে কখনো যেতাম না। বন্ধুর সঙ্গে খেলতে যেতাম। আর খেলতে গিয়ে দুবার মাথাও ফটিয়েছি। বাবার কোলে চড়ে সোজা পিজি হসপিটাল। সেলাই, ব্যান্ডেজ লাগিয়ে পরেরদিন আবার বইমেলায় হাজির। তখন আর খেলোয়াড় নয় শান্তশিষ্ট বালক। ১৯৮৩ সালে দে'জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হল বিনয় মুখোপাধ্যায়ের লেখা "যাযাবর অমনিবাস"।

 

বইমেলায় এই গ্রন্থের প্রকাশ অনুষ্ঠান ছিল। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন লেখক বিনয় মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক শংকর ও আনন্দবাজার পত্রিকার অশোককুমার সরকার। সাত বছরের অপু ফুলের মালা পরিয়ে দেয় অশোককুমার সরকারের গলায়। ছোট অপু প্রণাম ঠুকে দেয়। কথা শুরু করেন অশোকবাবু। কথা শুরু করতেই আসতে আসতে ঢলে পড়লেন। এ কী হল ফুল দিলাম আর তিনি বিদায় নিলেন! এমন ঘটনার পরে আর তো কেউ মালা নিতে চাইবে না।


বারো দিন স্কুল কামাই করে বইমেলাই ছিল আমার ঠিকানা। ছোট হাতে ব্যাগ ভর্তি বই পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া ছিল আমার ডিউটি, আর তাতেই আনন্দ। একটু বড়ো হতে বিলের ওপরে স্ট্যাম্প লাগানো ছিল আমার কাজ। তারপরে যখন বইমেলার পরীদের ভাল লাগত তখন সবচেয়ে বেশি পরী থাকত বুদ্ধদেব গুহ'র বইয়ের জায়গায়। তখন বুদ্ধদেব, শংকর, আশুতোষ, সুনীল, সমরেশ আরো অনেকের বেশ কিছু বই পড়ে ফেলেছি। কিন্ত পরী দেখার লোভে বসতাম বুদ্ধদেব গুহ'র তাকের সামনে। অনেক সময় গল্পের সারাংশ বলতে গিয়ে ওলট পালট করেছি। শংকরের 'জন অরণ্য'র কথা বলতে গিয়ে সুনীলের 'অরণ্যের দিনরাত্রি'র গল্প বলে 'জন অরণ্য' বিক্রি করে দিয়েছি। 

 

ছোট থেকেই কত লেখককে দেখেছি ময়দানে বইমেলার মাঠে হেঁটে যাচ্ছেন। উৎসাহী পাঠককে বলতে শুনেছি, ওই দেখ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হেঁটে যাচ্ছেন। প্রফুল্ল জেঠুর কাছে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম--

তখন ময়দানে বইমেলা হয়। লেখক প্রফুল্ল রায় টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় প্রফুল্ল জেঠুকে দেখে বলেন,

--তুই আমার সঙ্গে আয়।

--টিকিটটা কেটে নিই...--না। টিকিট কাটতে হবে না। আমি আছি, আমার সঙ্গে চল। শ্যামল জেঠুর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ, টিকিট চেক করার সিকিউরিটিদের গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,

--টিকিট না কেটেই শুনছি লোক ঢুকে পড়ছে। আপনারা ঠিকঠাক চেক করছেন না। আপনার ভাল করে চেক করুন। এই তোরা আয়। এরা আমার সঙ্গে আছে।
--হ্যাঁ স্যার। আসুন। 

বিনা টিকিটে ঢুকে পড়লেন জনা ছ'য়। মেলায় ঢুকে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,

--টিকিট কেটে ঢুকছে কিনা ভাল  করে চেক করে মেলায় ঢোকাবেন।

 

প্রকাশক লেখক গৌতম সেনগুপ্তের কাছে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম, একদিন বইমেলায় গৌতমদা ও শঙ্খ ঘোষ হাঁটছেন। একটু দূরে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক বান্ধবীর সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছেন। আগের দিনেও আর এক বান্ধবীর সঙ্গে হাঁটছিলেন। গৌতমদা শঙ্খ জেঠুকে বলেন, --শমীকদা রোজ নতুন নতুন বান্ধবীর সঙ্গে বইমেলায় ঘুরে বেড়ান। কী করে পায় বলুন তো?

--উত্তরটা যদি জানতাম তাহলে কী তোমার সঙ্গে ঘুরতাম।

বইমেলায় দে'জ পাবলিশিং এর স্টলের সামনে বসে সই দিচ্ছেন বুদ্ধদেব গুহ। এক সুন্দরী পাঠিকা তাঁর কেন বইটি বাড়িয়ে দেন সইয়ের জন্যে। বুদ্ধদেব জেঠু বলেন,

--তোমার নাম কী? 

একটু ঝুঁকে নাম বলেন। তখন বুদ্ধদেব জেঠু বলেন,

--আমি এখন চোখে ভাল দেখতে পাই না। চুমুর কাছাকাছি এলে দেখতে পাই। 

  বইমেলায় দুটি 'বাচ্চা বইচোর' ধরেছিলাম। ছেলে দুটির প্রশ্ন ছিল,

--কেমন করে ধরলেন?

--তোমায় দেখলাম ফাইলের চেন খুললে। তারপরে বই ঢুকিয়ে চেন লাগলে।

উত্তরে বলেছিল,

--এই লাইনে প্রথম তো...

বইমেলা চলতে থাকে আর নতুন গল্প তৈরি হয়।


কলকাতা বইমেলাkolkata book fairKolkata News

নানান খবর

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া